সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জনগণ যাকে ভালবাসবে, দায়িত্ব দিতে চাইবে, তাকেই দেবে- জেলা প্রশাসক বাহুবলে বিয়ের আনন্দ-ফুর্তি চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যুবতীর মুত্যু বাহুবল উপজেলা নির্বাচন : ২০ প্রার্থীর মাঝে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ বাহুবল উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বাহুবলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ বাহুবল হাসপাতালের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রথম সভা বাহুবলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাছাইয়ে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ বাহুবল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল শিশুদের বিবাদের জেরে আজমিরীগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩৫ দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর

না ফেরার দেশে মোল্লা স্যার : বেঁচে থাকবেন ভালোবাসায়

গতকাল (১৩ জুলাই) সকালে না ফেরার দেশেই চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় মোল্লা স্যার। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা সদরে অবস্থিত ‘দীননাথ ইনস্টিটিউশন সাতকাপন সরকারি হাইস্কুল’-এর (ডিএনআই) ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। শুদ্ধ নাম কাজী মাওলানা মুনীর উদ্দিন। কিন্তু ওই দীর্ঘ নামটি ছোট্ট ‘মোল্লা স্যারের’ ভালোবাসায় চাপা পরে গিয়েছিল অনেক আগেই। বহুদিন যাবতই তিনি রোগ-শোকে ভুগছিলেন । মোল্লা স্যারকে নিয়ে বহু অম্ল-মধুর স্মৃতি মানসপটে এসে ভীড় করছে। তিনি ছিলেন আমার শিক্ষক । আবার সৌভাগ্যক্রমে স্যারের সহকর্মী হিসেবেও একসাথে শিক্ষকতা করার সুযোগও হয়েছিল আমার। তখন স্যারকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল।

স্যার ‘৯১ থেকে ‘৯৫ সাল পর্যন্ত ডিএনআই স্কুলে আমাদের পড়িয়েছেন । বাংলা পড়াতেন। দীর্ঘ কবিতা মুখস্থ বলে যেতেন। কী অসাধারণ ক্লাস। সুযোগ পেলেই নীতিবাক্য সমৃদ্ধ কবিতা বলতেন। যা পরবর্তী জীবনে খুব কাজে আসছিল। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়তেন। ২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। শনিবার। ওইদিন দীননাথ ইনস্টিটিউশন সাতকাপনে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেই। বুকের ভেতর ধুকধুকানি। অভিজ্ঞতাহীন একজন অর্বাচীন শিক্ষক আমি। পন্ডিত স্যারের (শ্রদ্ধেয় বীরেশ্বর ভট্টাচার্য্য) স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলাম আমি। শিক্ষক মিলনায়তনে পণ্ডিত স্যার আর মোল্লা স্যারের চেয়ার ছিল পাশাপাশি। তাই বাধ্য হয়েই মোল্লা স্যারের পাশে বসে ডিএনআই স্কুলে শিক্ষকতা করছি পাঁচটি বছর। শিক্ষকতা করতে গিয়ে স্যারের কত সহযোগিতা, কত পরামর্শ যে পেয়েছি! সহযোগিতা চাইলে কখনও ফিরিয়ে দিতেন না। তবে স্যারের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে চাইলে সময় সুযোগ বুঝে বলতে হতো। সুদিনে-দুর্দিনে যতটুকু পেরেছেন সহযোগিতা করেছেন।

আমি যে পাঁচটি বছর স্যারের সাথে শিক্ষকতা করছি, তখন তিনি প্রায় বিদায়ের যাত্রী। কিন্তু, বয়স কোনো অজুহাতের কারন হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং ওই বয়সেও স্যারের জনপ্রিয়তা দেখে আমরা বিমোহিত হতাম। স্যারের ক্লাস মানেই ছাত্রদের উবছে পরা ভীড়। স্যারের ক্লাস মানেই আনন্দ! সাদা সফেদ পাঞ্জাবি পায়জামা পড়তেন। বাটাভরা পান সুপারি থাকত পাঞ্জাবির পকেটে। স্যারের পান – সুপারি মানে অন্যরকম ব্যাপার স্যাপার। সিঙ্গাপুরি সুপারি, ধবধবে সাদা চুন আর তাজা সবুজ পান। দেখলেই লোভ লাগতো। আড়চোখে চেয়ে থাকতাম। প্রথম প্রথম বলতে সাহস পেতাম না। রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলতেন, ‘নেও একটু। তোমাদের পান খাওয়া ঠিক না।’ যতবারেই দিতেন, ওই একই কথা বলতেন। তিনি ছিলেন দশম শ্রেনির শ্রেনি শিক্ষক। বেশীর ভাগ ছাত্রছাত্রীই তখন স্যারের নাতি-নাতনীর মতো। ওরা তো স্যারকে পেয়ে আনন্দে মসগুল। দূর থেকে আমরা এসব দেখতাম, আর হাসতাম। মোল্লা স্যারের কিছু গুণ আকৃষ্ট করছিল আমাকে। উনার দৃষ্টিতে যা সত্য তা অকপটে বলে ফেলতেন। কে কি ভাবলো তা পাত্তা দিতেন না। তিনি সব সময় ডায়েরি ব্যবহার করতেন। পরীক্ষায় কতটি উত্তরপত্র নিলেন, ক্লাস রুটিন; সব লিখে রাখতেন এতে। তিন কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা মোল্লা স্যার। তিন মেয়ে এবং তিন জামাতার সবাই প্রতিষ্ঠিত। মৃত্যুকালে স্যারের বয়স হয়েছিল ৭৫। এই দীর্ঘ জীবনে অনেকটা নির্ভেজাল জীবনযাপনই করে গেছেন তিনি। আর ওই সাদাসিদে জীবনযাপনের জন্যেই তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

লেখকঃ পংকজ কান্তি গোপ
সংস্কৃতি কর্মী ও শিক্ষক
পুটিজুরী এস.সি.উচ্চ বিদ্যালয়
বাহুবল, হবিগঞ্জ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com